সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:২১ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
মিরপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের বর্ষপূর্তি উদযাপনে সাংবাদিক নেতা খান সেলিম রহমানকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান পল্লবী থানা এলাকায় টানা অভিযানে মাদক সাম্রাজ্যের পতন *লক্ষ্মীপুরে রুসুল গঞ্জ বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নয়নে ব্যাপক উদ্যোগ* রাজশাহীতে দুটি ট্রাকের ১০ লক্ষ টাকার যন্ত্রাংশ চুরির অভিযোগ নীলফামারীতে ৫ দফা দাবিতে জামায়াতের স্মারকলিপি চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা আমিনুল হকের ঢাকা-১৪ আসনে ধানের শীষে ভোট চেয়ে যুবদল নেতা সাজ্জাদুল মিরাজের বিশাল মিছিল ঝিনাইদহে সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযান অস্ত্র উদ্ধার আটক ২ জন ঝিনাইদহের মহেশপুরে বিজিবির অভিযানে ভারতীয় মদ উদ্ধার ও পাঁচ বাংলাদেশি আটক করতোয়া নদীতে নিখোঁজের৩২ ঘন্টা পর হৃদয়ের লাশ উদ্ধারের

জুলাই আন্দোলনে লাশ গুম হওয়া হৃদয়ের পরিবার শহীদ দিবসের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া পরিবারের। নিন্দার ঝড়।

বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী

টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ্য দিবালোকে ১০/১২জন পুলিশ একজনকে ঘেরাও করে বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলির পর তার দেহ টেনে-হিচড়ে নিয়ে যায় পুলিশ। জুলাই বিপ্লবে সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল সেই ভিডিও। উল্লেখযোগ্য সেই ভিডিওটি সকলের দৃষ্টিগোচরের পর জানা যায় কোটি কোটি মানুষের হৃদয়কে নাড়িয়ে দেয়া সেই খুন হওয়া মানুষটি টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার আলমনগর গ্রামের কলেজ ছাত্র হৃদয়। হৃদয়ের পরিবারের দাবি, গত ৫ আগষ্ট গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে হৃদয় শহীদ হন। একমাত্র পুত্র হৃদয়ের এমন নৃশংস হত্যাকান্ডের শোক এখনো ভুলতে পারেনি তার পরিবার। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল ১৬জুলাই বুধবার ছিল জুলাই শহীদ দিবস-২০২৫। সেই দিবস স্মরণে গোপালপুর উপজেলা প্রশাসন উপজেলা পরিষদ হল রুমে আয়োজন করে দোয়া, সংবর্ধনা ও আলোচনা সভা। সেই অনুষ্ঠানে সমাজের সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও শহীদ হৃদয়ের পরিবারকে ডাকা হয় নাই। সরকার ঘোষিত এমন একটা দিবসে উপজেলা প্রশাসন শহীদ পরিবারকে আমন্ত্রণ না জানানোয় সবাই বিস্মিত হয়েছেন। হৃদয়ের পরিবারের সদস্যরা প্রশাসনের এমন আচরণের নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায় আলমনগর উত্তরপাড়ার দিন মজুর লাল মিয়ার এক মাত্র পুত্র হৃদয় হেমনগর ডিগ্রি কলেজে পড়াশোনা করতো। সংসারে অভাব অনটনের কারণে হৃদয় গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ীতে বোন জামাই ইব্রাহীমের সাথে থেকে অটো রিক্সা চালাতো। এই আয়েই সে পঙ্গু বাবা-মার খাবারদাবার ও নিজের পড়াশোনার খরচ চালাতো। ইব্রাহীম মিয়া গাজীপুরের কোনাবাড়ী থানায় দায়ের হওয়া মামলার উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, গত ৫ আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনার পলায়নের পর কোনাবাড়ীতে ছাত্র জনতার বিজয় মিছিলে অংশ নিলে পুলিশ তাকে আটক করে প্রকাশ্য গুলি করে হত্যা করে। হত্যাকান্ডে ভাইরাল হওয়া ভিডিও থেকে দেখা যায়, পুলিশ সদস্যরা হৃদয়কে গলির ভিতর থেকে ধরে এনে কোনাবাড়ীর শরীফ মেডিকেলের সামনে মারধোর করছে। বাঁচার জন্য সে আকুতি জানিয়ে ও কান্নাকাটি করে পুলিশের হাতে-পায়ে পযর্ন্ত ধরছে।তবুও তার শেষ রক্ষা হয়নি। একপর্যায়ে একজন পুলিশ সদস্য হৃদয়ের বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে নির্মমভাবে গুলি করে তাকে হত্যা করেছে। সেখানে ধোঁয়া উড়ছে। পুলিশ চলে যাওয়ার পরেও কিছুক্ষণ মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করে করে হৃদয় একপর্যায়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এরপর পুলিশের আরেকটি দল এসে তার লাশটিকে টেনে-হিঁচড়ে কোনাবাড়ী থানার ভিতরে নিয়ে যায়।
মামলার বাদী আরো জানান, গোলাগুলির সময় তিনি কাছের একটি ভবনে আশ্রয় নেন। হৃদয়কে ধরে নিতে এবং দূর থেকে গুলি করতে দেখেন। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে থানায় গিয়ে তিনি দেখেন পুলিশ শূন্য অর্থাৎ সেখানে কোনো পুলিশ নেই। এরপর লাশের সন্ধানে বহুবার থানায় ধর্ণা দিয়েও কোনো লাভ হয়নি।গত ২৬ আগষ্ট কোনাবাড়ী থানার তদানিন্তন ওসি মোঃ শাহ আলম ডেকে নিয়ে লীগ সরকারের ৫৭ নেতাকর্মী এবং অজ্ঞাতনামা কয়েক পুলিশ সদস্যকে আসামী করা এজাহারে স্বাক্ষর নেন। গাজীপুর পুলিশ সুপারের নিকট দায়ের করা অভিযোগে পরবর্তীতে তিনি জানান, ঘটনার দিন দায়িত্বরত পুলিশরাই হৃদয়কে হত্যা ও গুম করে। মামলার প্রথম তদন্তকারি অফিসার উৎপল কুমার সাহা ভাইরাল ভিডিও পর্যালোচনা করে এক প্রতিবেদনে আদালতকে জানান, হৃদয় হত্যার সাথে জড়িত ছিলেন কনষ্টেবল আকরাম হোসেন। গত ১০ সেপ্টেম্বর তাকে গ্রেফতার করা হয়।
এদিকে আদালতের এক নির্দেশে গত ২৮ জানুয়ারী হৃদয় হত্যা মামলা তদন্তের দায়িত্ব পান গাজীপুর ডিবির এসআই মোঃ ইব্রাহীম হোসেন। তিনি জানান, হত্যাকান্ডের প্রমাণ সেই ভাইরাল ভিডিওসহ অন্যান্য ডকুমেন্টস, সাক্ষী ও আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে।ইতিমধ্যে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। খুব দ্রুতই মামলার চূড়ান্ত অভিযোগনামা দাখিল করা হবে। হৃদয়ের মা রেহানা বেগম জানান, পুত্রের লাশটি একনজর দেখার জন্য এখনো তার হৃদয় কাঁদে। বাড়িতে পঙ্গু স্বামী। সম্পত্তি বলতে তিন শতাংশের একটি ভিটেবাড়ি। মহাজনী ঋণের আড়াই লক্ষ টাকায় ছেলেকে ১টি অটো কিনে দেন। এর আয়েই পেট চলতো। এখন অটোর চাকা বন্ধ হওয়ায় সংসারের চাকা বন্ধ হওয়ার দশা। হৃদয়ের বোন জেসমিন জানান, জুলাই গণ অভ্যুত্থানে শহিীদদের অনেক পরিবার সরকারি অনুদান পেয়েছেন। কিন্তু লাশ গুম হওয়ায় শহিদ তালিকায় হৃদয়ের নাম স্থান পায়নি। সম্প্রতি শহীদ তালিকায় হৃদয়কে অন্তর্ভূক্ত করার জোর দাবিতে গোপালপুর উপজেলা পরিষদ ঘেরাও এবং মানববন্ধন করেন। আজকের অনুষ্ঠানে পরিবারের কাউকে আমন্ত্রণ না জানানোয় প্রমাণিত হয় গোপালপুর উপজেলা প্রশাসনের মধ্যে স্বৈরাচারের প্রেতাত্মা লুকিয়ে রয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল ট্রুথ জাষ্টিস প্রজেক্ট এবং টেক গ্লোবাল ইন্সষ্টিটিউট হৃদয় হত্যার ভিডিও ফুটেজের ফরেনসিক রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে প্রামাণ্য চিত্র বানিয়েছে। সেই প্রামাণ্য চিত্রের নির্মম দৃশ্যটি এখনো নেট জগতে ভাইরাল। গোপালপুর উপজেলা জামায়াতের আমীর হাবিবুর রহমান জানান, ৫ আগষ্ট হৃদয় পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। তার দলের নেতারা পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করে সাত্বনা, তালিকাভূক্তকরণ এবং বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জুলাই শহীদ দিবসের অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবারের সদস্যদের আমন্ত্রণ না জানানোর জন্য তীব্র নিন্দা জানান। গোপালপুর পৌর বিএনপির সম্পাদক চাঁন মিয়া জানান, হৃদয় ৫ আগষ্ট শহীদ হন এটা সবাই জানেন। উপজেলা প্রশাসন তার পরিবারের সদস্যদের আমন্ত্রণ না জানিয়ে বৈষম্য করেছেন। এ ব্যাপারে গোপালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তুহিন হোসেন জানান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ জানানোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কেন তারা হৃদয়ের পরিবারকে জানায়নি তা তিনি জানেননা। তাছাড়া জুলাই ফাউন্ডেশনের শহীদ তালিকায় হৃদয়ের নাম যুক্ত হয়নি। তার নাম যাতে অন্তর্ভূক্ত হয় সে জন্য প্রশাসনিক চেষ্টা চলছে এবং ওই অসহায় পরিবারকে বেশ কয়েকবার নানাভাবে সহযোগিতা করা হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুকে আমরা