খন্দকার জলিল-স্টাফ রিপোর্টার
পটুয়াখালীর উপকূলীয় জনপদ গলাচিপা উপজেলা। এখানকার প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছেন সদ্য যোগদানকারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদুল হাসান। তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন অল্প কিছুদিন হলো, কিন্তু এর মধ্যেই তাঁর সততা, নিষ্ঠা ও কর্মঠতা নজর কেড়েছে সকলের।
এই কর্মকর্তা শুধু ইউএনও হিসেবে সীমাবদ্ধ নন। গলাচিপায় বর্তমানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) নেই, ফলে ভূমি অফিসের যাবতীয় কাজও তাকেই সামলাতে হচ্ছে। পাশাপাশি তিনি পরিচালনা করছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। এছাড়া পৌরসভার মেয়রের দায়িত্বও আপাতত তিনিই পালন করছেন। এক কথায় একাই বহুবিধ দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন তিনি, তবুও নেই কোনো অভিযোগ বা ক্লান্তির সুর।
প্রশাসনিক জটিলতা, ভূমি সংক্রান্ত মামলা, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, উন্নয়ন প্রকল্পের তদারকি, পৌর এলাকার সমস্যা দেখা, সাধারণ মানুষের অভিযোগ শোনা-সবকিছুতেই তাকে দেখা যায় সমানতালে সক্রিয়। প্রত্যেক কর্মদিবসে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন এই কর্মকর্তা।
একাধিক দায়িত্ব একসাথে পালন করা কি ক্লান্তিকর নয়? এই প্রশ্নের জবাবে মাহমুদুল হাসান বলেন, “ক্লান্তি আসে না। আমি কাজের মধ্যেই নিজেকে খুঁজে পাই। মানুষের জন্য কিছু করতে পারাই আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। এই জায়গায় বসে আমি মানুষকে সরাসরি সেবা দিতে পারছি, এটাই আমার জন্য সৌভাগ্যের।” মানবিক প্রশাসন গঠনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
গলাচিপায় তার আগমনের পর থেকেই সাধারণ মানুষ যেন এক নতুন আশার আলো খুঁজে পেয়েছে। প্রশাসনের দরজা এখন সাধারণ মানুষের জন্য আরও বেশি উন্মুক্ত। উপজেলা অফিসে এখন কেউ ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয় না। অভিযোগের দ্রুত নিষ্পত্তি হচ্ছে, ফাইলপত্র আটকে থাকছে না, হয়রানিও অনেক কমে গেছে।
বয়স্ক কোনো নাগরিক ভূমি সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে গেলে তিনি নিজে দাঁড়িয়ে সমাধান করে দেন। আবার কোনো দিন পৌর শহরের রাস্তার সমস্যার কথা শুনে সেখানে হঠাৎ হাজির হয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেন। এক কথায়, মাঠ এবং অফিস- দুই জায়গাতেই সমান দক্ষতায় তিনি দায়িত্ব পালন করছেন।
স্থানীয় রাজনৈতিক, সামাজিক ও ব্যবসায়ী মহল বলছে, গলাচিপায় অনেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসেছেন, গেছেন; কিন্তু মাহমুদুল হাসানের মতো একনিষ্ঠ ও কর্মঠ অফিসার অনেক দিন পর দেখা গেছে। তিনি রাজনীতি নিরপেক্ষ, সরল, সৎ এবং সর্বোপরি জনগণের কষ্ট বুঝতে পারেন।
একজন সরকারি কর্মকর্তার মধ্যে যে মানবিকতা থাকা উচিত, তা তার মাঝে পুরোপুরি বিদ্যমান। তার অফিস কক্ষে ঢোকার জন্য দরজায় কড়া নাড়ার প্রয়োজন পড়ে না- সবার জন্য উন্মুক্ত। যে কারণে দিন দিন তার প্রতি মানুষের আস্থা, ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা বেড়েই চলেছে।
বর্তমান সময়ের প্রশাসনে যেখানে অনেক জায়গায় দায়সারা মনোভাব লক্ষ্য করা যায়, সেখানে গলাচিপার ইউএনও মাহমুদুল হাসান হচ্ছেন এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। তিনি প্রমাণ করেছেন- ইচ্ছা থাকলে একসাথে বহু দায়িত্বও নিষ্ঠার সাথে পালন করা সম্ভব। জনগণের সেবায় নিয়োজিত এই ক্লান্তিহীন সৈনিক যেন দীর্ঘদিন গলাচিপার মানুষের পাশে থাকতে পারেন এটাই এখন সবার কামনা।