নিজস্ব প্রতিবেদক:- খুলনা নগরের শিববাড়ি মোড়ের একটি রেস্তোরাঁর নিচে গত ৮ নভেম্বর শনিবার বিকেলে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার দুই সাংবাদিকের ওপর সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ, তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছে বাংলাদেশ সেন্ট্রাল প্রেস ক্লাব (B.C.P.C)।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে সোমবার (১০ নভেম্বর) প্রকাশিত প্রেস বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এই ঘটনা কোনো ব্যক্তিগত বিরোধের ফল নয়, বরং দেশের গণমাধ্যম স্বাধীনতাকে নীরব করতে চাওয়া একটি পরিকল্পিত আক্রমণ।
হামলায় গুরুতর আহত হন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা’র খুলনা ব্যুরো প্রধান ও বিএফইউজের সহকারী মহাসচিব এহতেশামুল হক শাওন এবং একই পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার কামরুল হোসেন মনি। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় তাঁদের দ্রুত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
জানাযায় একটি প্রতিবেদনের বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য ফোনে যোগাযোগ করতে গিয়ে যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়, তা নিরসনের উদ্দেশ্যে দুই সাংবাদিক ঘটনাস্থলে পৌঁছান। ঠিক সেই মুহূর্তে সাত–আটজন দুর্বৃত্ত অতর্কিতে তাঁদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। নির্বিচারে হামলার মুখে শাওন আশ্রয় নিতে বাধ্য হন এবং সহকর্মী কামরুল মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাঁকে আরও নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করা হয়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় তাঁরা উদ্ধার পান।
বাংলাদেশ সেন্ট্রাল প্রেস ক্লাব (B.C.P.C)–এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি খান সেলিম রহমান বলেন “খুলনা শহরে ঘটে যাওয়া ২ সাংবাদিকের ওপর এই নৃশংস ও পরিকল্পিত হামলার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুতর হুমকির মুখে রয়েছে। যেসব সাংবাদিক সাহস করে সত্যের পক্ষে কলম চালান, তাদের ওপর এই ধরনের বর্বরোচিত হামলা কোনো সভ্য সমাজে অগৃহীত এবং অমানবিক। এটি শুধু ব্যক্তিগত হামলা নয়, বরং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিক পেশার প্রতি সুস্পষ্ট আঘাত।
আমরা রাষ্ট্রের কর্ণধার, আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাচ্ছি, যেন এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকল ব্যক্তি চিহ্নিত, গ্রেপ্তার এবং দ্রুততম সময়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। যদি এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তবে এটি সমাজে এক ধরণের ভয় ও সহিংসতার সংস্কৃতিকে প্রসারিত করবে। আমরা একান্তভাবে দাবি জানাচ্ছি, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, স্বাধীনতা এবং পেশাগত মর্যাদা রক্ষার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।”
বাংলাদেশ সেন্ট্রাল প্রেস ক্লাব (B.C.P.C)–এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাহিদুল হাসান সরকার বলেন“সাংবাদিকতার ওপর আঘাত মানে সরাসরি জনগণের তথ্যের অধিকার, সত্য অনুসন্ধান এবং গণতান্ত্রিক সমাজের মূল স্তম্ভের ওপর আঘাত। খুলনায় সংঘটিত এই ন্যক্কারজনক হামলা শুধু দুই সাংবাদিকের প্রতি নয়, বরং গোটা গণমাধ্যম সম্প্রদায়ের ওপর সন্ত্রাসী চাপ ও ভীতি সৃষ্টি করার একটি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত। এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে, সাংবাদিকরা প্রতিদিন নানা ঝুঁকি নিয়ে সত্য প্রকাশের দায়িত্ব পালন করছেন, এবং তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা রাষ্ট্র ও প্রশাসনের অতি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। আমরা রাষ্ট্র ও প্রশাসনকে আহ্বান জানাচ্ছি—দোষীদের দ্রুত শনাক্ত, গ্রেপ্তার, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করা হোক এবং তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা হোক। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না হলে, সমাজে তথ্যের প্রতি আস্থা ক্ষুণ্ণ হবে এবং সত্যের পথে আগ্রাসন আরও বাড়বে। আমাদের দাবি, এই ধরনের বর্বর হামলার পুনরাবৃত্তি রোধে দৃঢ় ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এখনই অপরিহার্য।”
বাংলাদেশ সেন্ট্রাল প্রেস ক্লাব (B.C.P.C) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই নির্যাতিত, অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত সাংবাদিকদের পাশে থেকেছে এবং ভবিষ্যতেও অটলভাবে পাশে থাকবে। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর যে কোনো বর্বর আক্রমণ গভীর উদ্বেগের বিষয়। সংগঠনটি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত, এবং প্রয়োজনীয় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাষ্ট্র ও প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছে।
প্রিয় সাংবাদিক সহকর্মী ভাই—বোন ও বন্ধুগণ, আমাদের বার্তা:
১.সবাই নিজ অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করুন, অন্যায়কে ভয় পাবেন না; কারণ সত্যের ক্ষীণ শব্দও একসময় বজ্রের মতো প্রতিধ্বনি তোলে।
২. কলমই আপনার ঢাল; ন্যায় রক্ষার শক্তি জন্মায় এখানেই। দায়িত্বকে মর্যাদা দিন।
৩. ভয় পেলে মুখ লুকান, কিন্তু শেষ পর্যন্ত দায় আপনাকেই বহন করতে হবে।