সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ০২:১৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
মিরপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের বর্ষপূর্তি উদযাপনে সাংবাদিক নেতা খান সেলিম রহমানকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান পল্লবী থানা এলাকায় টানা অভিযানে মাদক সাম্রাজ্যের পতন *লক্ষ্মীপুরে রুসুল গঞ্জ বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নয়নে ব্যাপক উদ্যোগ* রাজশাহীতে দুটি ট্রাকের ১০ লক্ষ টাকার যন্ত্রাংশ চুরির অভিযোগ নীলফামারীতে ৫ দফা দাবিতে জামায়াতের স্মারকলিপি চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা আমিনুল হকের ঢাকা-১৪ আসনে ধানের শীষে ভোট চেয়ে যুবদল নেতা সাজ্জাদুল মিরাজের বিশাল মিছিল ঝিনাইদহে সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযান অস্ত্র উদ্ধার আটক ২ জন ঝিনাইদহের মহেশপুরে বিজিবির অভিযানে ভারতীয় মদ উদ্ধার ও পাঁচ বাংলাদেশি আটক করতোয়া নদীতে নিখোঁজের৩২ ঘন্টা পর হৃদয়ের লাশ উদ্ধারের

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে নতুন বার্তা দিল ডাকসু নির্বাচন

আওরঙ্গজেব কামালঃ বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পূর্ণ প্রতিষ্ঠা একদিনে সম্ভব নয়। এটি ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে সাহস, সহনশীলতা ও জয় পরাজয় মেনে নেওয়ার মানসিকতার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন সেই ধারাবাহিকতাকেই সামনে এনেছে। যেখানে বিগত ১৫ বছর ধরে দেশের জনসাধারন গনতন্ত্রের নির্বাচন দেখেনাই সেখানে ডাকসুর নির্বাচনের উৎসব মূখর পরিবেশ দেখে দেশবাসী কিছুটা হলেও সস্তি পেয়েছে। যেখানে নির্বাচন মানে মারামারি হানাহানি এমনও কি জীবনকে বলিদান দিতে হয়,সেখানে একেবারে কোন সমস্যা ছাড়ায় ডাকসু নির্বাচন আমাদের অনেক কিছু শিক্ষা দেয়। যদিও পরস্পর বিরোধী নানা বিতর্ক, কারচুপির অভিযোগ এবং উত্তেজনার মাঝেও এই নির্বাচন ছাত্র রাজনীতিতে একটি নতুন বাস্তবতা তৈরি করেছে। দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সময় একাধিক কেন্দ্রে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ ওঠে। বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলো বা প্রতিদন্দী প্রার্থীরা অভিযোগ করেছে, ক্ষমতাসীনদের প্রত্যক্ষ মদদে নির্বাচনের ফলাফল প্রভাবিত করার চেষ্টা হয়েছে। যে খানে কলকাটি নেড়েছে ছাত্র শিবির। আর তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল ভোট শুরুর কিছুক্ষন পর থেকে। সে যাই হোক চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা যায়, ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেল ২৮টি পদের মধ্যে ২৩টিতে বিজয়ী হয়। বাকি ৫টি পদে অন্য প্যানেল জয়ী হলেও বিএনপি-সমর্থিত ছাত্রদল একটি পদেও জয়লাভ করতে পারেনি। এটা মেনে নিতে হয়তো অনেকে পারছেন না। তবুও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার স্বার্থে ছাত্রদল ফলাফল মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ প্রতিক্রিয়ায় বলেন— “ ডাকসুর প্রার্থীরা যে ফলাফল পেয়েছে তা আমাদের জন্য হতাশাজনক হলেও গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে আমরা এ ফলাফল মেনে নিচ্ছি। বিজয়ীদের আমরা অভিনন্দন জানাই। এই উদারতা জাতীঁ আগে কখনো দেখেছে কিনা তা আমার জানা নাই। অন্যদিকে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না মন্তব্য করেন—“ডাকসু নির্বাচন নিয়ে যত আলোচনা হোক না কেন, এর কোনো প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়বে না। ছাত্ররাজনীতির বাস্তবতা আর জাতীয় রাজনীতির বাস্তবতা এক নয়। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তার ফেসবুক পোস্টে মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম লিখেছেন, ডাকসু নির্বাচনে বিজয়ী ও বিজিত সবাইকে অভিনন্দন । জয়-পরাজয় মূখ‍্য নয়, ভোট দেওয়ার অধিকার ফিরে আসাটা গুরুত্বপূর্ণ ।এটা গণতন্ত্রের বিজয়, বর্ষা বিপ্লবের পর নতুন বাংলাদেশের বিজয়।রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতির দীর্ঘ ইতিহাসে ডাকসু নির্বাচন সবসময় আলোচিত ও বিতর্কিত। এবারের নির্বাচনও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে একটি বড় দিক হলো—পরাজিত পক্ষের স্বতঃস্ফূর্তভাবে ফলাফল মেনে নেওয়া। এটিকে তারা গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন।গণতন্ত্র মানে শুধু নির্বাচন নয়, বরং ভিন্নমত মেনে নেওয়া, পরাজয় স্বীকার করার সাহস এবং প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার মানসিকতা। ডাকসু নির্বাচন সেই বার্তাই দিয়েছে—সব মতবিরোধের ঊর্ধ্বে থেকেও গণতান্ত্রিক ধারা টিকিয়ে রাখা সম্ভব। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। অনেকেই মনে করছেন, ছাত্রশিবিরের এ বিজয় ছাত্র রাজনীতিতে নতুন বাস্তবতা তৈরি করবে। অন্যদিকে ছাত্রদলের শূন্য ফলাফল তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতাকে আরও স্পষ্ট করেছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, দীর্ঘদিন পর হলেও একটি নির্বাচনী সংস্কৃতি ফিরে এসেছে—যা ভবিষ্যতের রাজনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ৮০ শতাংশ ভোটারের ভোটাধিকার প্রয়োগই প্রমাণ করেছে ফ্যাসিবাদী ও তাদের দোসররা আজ জাতীয় রাজনীতিতে অগ্রহণযোগ্য। উৎসবমুখর পরিবেশে ব্যাপক উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে, ভারতীয় তাবেদার শ্রেণির অংশগ্রহণ ছাড়াও বাংলাদেশের রাজনীতি তার স্বকীয়তা ও গতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম। আগ্রাসনবাদী ভারত ও তাদের স্বার্থ রক্ষাকারী বিভিন্ন সংগঠনের অপপ্রচারের সমুচিত জবাব দিয়ে ভোটাররা ফলাফলের মাধ্যমে বার্তা দিয়েছে, ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সাথে সাথে এদেশে চেতনা ব্যবসারও সলিল সমাধি ঘটেছে। একই সাথে তারা ইসলামী মূল্যবোধ ও মুসলিম জাতীয়তাবাদের প্রতি আস্থা রেখেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ঢাবি ৪৭,৫২,৬৯,৭১,৯০,২৪ এর মতো বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে জাতির দিশারী হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। বঙ্গভঙ্গ রদের মতো অপূরণীয় রাজনৈতিক ক্ষতি মেনে নিয়ে বিনিময়ে তুলনামূলকভাবে অতি সাধারণ একটি বিশ্ববিদ্যালয় দাবির সুদূরপ্রসারী ব্যাপকতা ও গুরুত্ব, ডাকসু নির্বাচন’২৫ এর মাধ্যমে নতুন করে আবারও প্রমাণিত হলো যে গনতন্ত্র এ দেশে এখনো প্রতিষ্টা করা সম্ভাব।

লেখক ও গবেষক
আওরঙ্গজেব কামাল
সভাপতি, ঢাকা প্রেসক্লাব


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুকে আমরা