মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:০০ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
রাজশাহীর উন্নয়নে ডিসি আফিয়া আখতারের বহুমুখী উদ্যোগ নীলফামারী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিদ মাহমুদ গ্রেপ্তার। চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা মেহেরপুরের জামাল কোমায় থাকা গণতন্ত্র: সত্যিই কি শক্তি ফিরে পাচ্ছে? মাদক ব্যবসা করতে নিষেধ করায়- কালীগঞ্জে ৪ সহোদরসহ একই পরিবারের ৫ জন জখম, আটক ৩ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নির্বাচিত তুহিন সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের মাসিক কল্যাণ সভা অনুষ্ঠিত চার দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের গণছুটিতে পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা খাল পরিষ্কার অভিযানে আমিনুল হক: জনগণকে সঙ্গে নিয়েই পরিবর্তন সম্ভব আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষে সাতক্ষীরায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

কোমায় থাকা গণতন্ত্র: সত্যিই কি শক্তি ফিরে পাচ্ছে?

আওরঙ্গজেব কামাল : বাংলাদেশের গণতন্ত্র দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে এক অদৃশ্য শ্বাসরোধের মধ্যে ছিল। রাজনৈতিক হত্যা, গুম, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার হ্রাস—সব মিলিয়ে গণতন্ত্র কার্যত কোমায় ছিল। জনগণ অনেক সময় অনুভব করেছে, তাদের ভোট, দাবি ও অধিকার কেবল কাগজে লেখা। তবে ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ধীরে ধীরে পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। গণতন্ত্র তার চোখ মেলে তাকাচ্ছে, ধীরে ধীরে শক্তি ফিরছে, কিন্তু সংশয় রয়ে গেছে—এই গণতন্ত্র কি সত্যিই সুস্থভাবে হাঁটতে পারবে? এর মূল কারণ রাজনৈতিক অস্থিরতা। স্বৈরাচার বিরোধী দলগুলো ৫ আগস্টের সময় একেত্রে হয়ে ফ্যাসিবাদ শেখ হাসিনাকে এ দেশ থেকে বিতাড়িত করেছেন। এছাড়া গত ১৭ বছর ধরে জামাত সহ ২০ দল বিএনপির সাথে জোটবদ্ধ ছিল। তাহলে এখন প্রশ্ন তারা কেন এক টেবিলে বসতে পারছে না। আর এভাবে চলতে থাকলে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন কি বর্তমান অন্তবর্তী কালীন সরকার করতে পারবে? এছাড়া দেশে যেভাবে রাজনৈতিক হত্যা ও সহিংসতা যেভাবে বেড়েছে তাতে কি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ন্ত্রণে নিয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে এ প্রশ্ন সর্বসাধারণের। আমি যদি একটু হিসাব মনে করিয়ে দিই তাহলে দেখা যায়,
মানবাধিকার সংস্থা ও স্থানীয় তথ্য অনুযায়ী, গত এক দশকে রাজনৈতিক হত্যা হয়েছে প্রায় ১,২০৮টি, গুমের শিকার হয়েছেন প্রায় ৪০০ জন নাগরিক। ৫ আগস্টের পরও রাজনৈতিক সহিংসতা থেমে নেই। বিভিন্ন সূত্র বলছে, আগস্ট–সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত অন্তত ৫২ জন রাজনৈতিক কর্মী আহত হয়েছেন এবং ৭ জন নিহত হয়েছেন। হয়তো অনেক সম্পদ নষ্ট হয়েছে এদেশের যেটার হিসাব মিলানো সম্ভব নয়। বিগত সময়ে রাজনৈতিক হত্যার ধরন ছিল সংগঠিত ও পরিকল্পিত। বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। এসব হত্যার মধ্যে অনেকেই এখনও বিচার পাননি, যা গণতন্ত্রকে অচল করে রেখেছে। গত ৫ই আগস্টের ছাত্র জনতার হামলায় যে বর্বরতা ঘটেছে তা এদেশে ইতিহাসে সাক্ষী হয়ে থাকবে। আর এই অপরাধের দায় অবশ্যই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই নিতে হবে। অবশ্যই আন্তর্জাতিক আদালতে তার বিচার হচ্ছে ইতিমধ্যে অনেক সাক্ষী সম্পন্ন হয়েছে এখন রায়ের অপেক্ষায়। এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হলো গণঅধিকার পরিষদের শীর্ষ নেতা ভিপি নূরুল হক নূরের ওপর হামলা। ২৯ আগস্ট রাতে একটি রাজনৈতিক কর্মসূচির সময় সংঘটিত এই হামলায় নূর গুরুতর আহত হন। চিকিৎসকরা জানান, তার মাথা, নাক ও চোখে গুরুতর আঘাত আছে। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এই হামলা রাজনৈতিক অঙ্গনের ভঙ্গুর পরিস্থিতিকে আরও স্পষ্ট করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে নিন্দা জানানো ও তদন্তের ঘোষণা দেওয়া হলেও বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষ এটিকে গণতান্ত্রিক কণ্ঠরোধের চিহ্ন হিসেবে দেখছে। এছাড়া বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিনিয়ত আন্দোলন সংগ্রাম করছে বিগত ১৭ বছর বঞ্চিতরা এ সময় অনেক ধরনের ঘটনা ঘটেছে। দেশে প্রতিনিয়ত মব সৃষ্টি হচ্ছে । এক্ষেত্রে মিডিয়া কর্মীরা বাদ যাচ্ছে না।
আমি মনে করি,গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অবদান রাখছেন মিডিয়া কর্মীরা। রাজনৈতিক বিভাজন, রাষ্ট্রীয় চাপ এবং ব্যক্তিগত ঝুঁকি সত্ত্বেও তারা মাঠে থেকে সত্য প্রকাশ করছেন। আর এই সত্য প্রকাশ করতে যেয়ে তুহিনের মত অনেক সাংবাদিককে জীবন দিতে হয়েছে বা হচ্ছে। নূরের ওপর হামলার ঘটনার মতো ঘটনা মিডিয়ার মাধ্যমে জনগণের কাছে পৌঁছেছে। মিডিয়া ছাড়া গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণের প্রক্রিয়া এত দ্রুত এবং দৃশ্যমান হতো না। সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহ, ঘটনার সরাসরি প্রতিবেদন এবং বিশ্লেষণ উপস্থাপন করে জনগণের আস্থা রক্ষা করছেন। গণতন্ত্রের এই শ্বাস-প্রশ্বাস টিকিয়ে রাখার পেছনে মিডিয়া হলো অক্সিজেন সিলিন্ডার। মুমূর্ষু রোগে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যেমন অক্সিজেনের প্রয়োজন তেমনি গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য মিডিয়া বা মিডিয়া কর্মীদের প্রয়োজন রয়েছে। আর এজন্য প্রয়োজন মিডিয়া কর্মীদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা। বর্তমানে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিশ্বকর্মাদের মতামতে দেখা যায় তার ভিন্ন চিত্র। যেভাবে সাংবাদিক খুন ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে এমনিভাবে চলতে থাকলে আদৌ কি গণতন্ত্র তার আসল রূপ ফিরে পাবে? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। একপক্ষ চাচ্ছে পিয়ার-পদ্ধতিতে নির্বাচন, অপর পক্ষ চাচ্ছে পুরনো নিয়মে ভোট। এই দ্বন্দ্বই মূলত রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে অচলায়তনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত করতে হলে তিনটি শর্ত পূরণ অপরিহার্য—১। মিডিয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা,২। নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন,৩। রাজনৈতিক সহিংসতা ও সন্ত্রাস বন্ধ করা। তাদের মতে, এগুলো ব্যতীত গণতন্ত্রের সুস্থ হাঁটা সম্ভব নয়। বর্তমান রাজনৈতিক বিভাজন, দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর রাজনৈতিক চাপ—সবই গণতন্ত্রের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আজকের বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। রাজনৈতিক হত্যার রক্ত, গুম হওয়া পরিবারের আর্তনাদ, ভিপি নূরের ওপর হামলার রক্তাক্ত ব্যান্ডেজ—সবই দেখাচ্ছে যে গণতন্ত্র এখনও পুরোপুরি শক্তিশালী নয়। তবে আশার আলো আছে। মিডিয়া যদি সত্যকে তুলে ধরে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা যদি দায়িত্বশীল নকশা আঁকে, তাহলে হয়তো এই গণতন্ত্র একদিন শুধু হাঁটবে না, বরং শক্তিশালীভাবে দৌড়াতে পারবে। তবে
প্রশ্ন রয়ে গেছে: বাংলাদেশের গণতন্ত্র কি সত্যিই সুস্থভাবে হাঁটতে পারবে, নাকি আবারও দমন, বিভাজন ও ভয়ঙ্কর রাজনৈতিক সংঘর্ষের আঁধারে হারিয়ে যাবে? নাকি আবারো ১৭ বছর অপেক্ষা করতে হবে একটি কোন গণঅভ্যুত্থানের।
✍️ লেখক ও গবেষক
আওরঙ্গজেব কামাল
সভাপতি, ঢাকা প্রেসক্লাব


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুকে আমরা