সাখাওয়াত : ভ্রাম্যমান প্রতিনিধ
গৃহবধূ শাহনাজ বেগম লাকিকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা, আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় চিকিৎসাধীন
প্রধান আসামি নাছিমা বেগম গ্রেপ্তার, এলাকায় চরম উত্তেজনা
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় সুদের টাকার লেনদেনকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ এক ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে। সুদখোর মহিলার হাত থেকে বাঁচতে না পেরে শাহনাজ বেগম লাকি (ডাকনাম পাখি, বয়স ৩৫) নামের এক গৃহবধূ আগুনে দগ্ধ হয়ে এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। তার শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে। বর্তমানে তিনি রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন।
মামলার সূত্রপাত
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা হাজেরা বেগম বাদী হয়ে নাছিমা বেগমসহ আরও কয়েকজনকে আসামি করে ফরিদগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আলম নিশ্চিত করেছেন যে, মামলার প্রধান আসামি নাছিমা বেগমকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
ঘটনার বিবরণ
ভুক্তভোগীর স্বামী আমিনুল খান জানান, শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি বাড়ির পাশে দোকানে বসে ছিলেন। হঠাৎ ভাগিনা শাকিল এসে তাকে খবর দিলে তিনি দ্রুত ঘরে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন, স্ত্রী শাহনাজ বেগম আগুনে জ্বলতে জ্বলতে ডোবার পানিতে ঝাঁপ দিয়েছেন। তড়িঘড়ি করে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হলে রাতেই ঢাকার জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রতিবেশী প্রবাসী ফয়েজ আহম্মদের স্ত্রী নাছিমা বেগমের সঙ্গে সুদের টাকার লেনদেন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে একাধিকবার গ্রাম্য সালিশও হয়। কিন্তু নাছিমা দাবি করেন আরও টাকা নেওয়া হয়েছে, যদিও এর প্রমাণ নেই। এর আগেও নাছিমা তার স্ত্রীকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছিলেন এবং এ বিষয়ে একটি মামলা চলমান রয়েছে।
স্থানীয়দের বক্তব্য
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল হামিদ বলেন, “বিগত কয়েক মাসে একাধিকবার ইউনিয়ন পরিষদে উভয়পক্ষকে বসানো হয়েছিল। টাকা পরিশোধের ব্যাপারে নিষ্পত্তিও হয়েছিল। তবুও নাছিমা বেগম নতুন করে আরও টাকা পাওনার দাবি তোলেন। তার দাবির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।”
অন্যদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, নাছিমা বেগম শুধু শাহনাজ বেগমের সঙ্গেই নয়, এলাকার আরও অনেক পরিবারের সঙ্গে সুদের টাকার কারণে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন। তার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে সুদের ব্যবসা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। কিছুদিন আগে তার অত্যাচারের প্রতিবাদে এলাকাবাসী মানববন্ধনও করেছিলেন।
পুলিশের বক্তব্য
ফরিদগঞ্জ থানার ওসি মো. শাহ আলম বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, সুদের টাকার লেনদেন নিয়ে বিরোধই এই ঘটনার মূল কারণ। মামলার প্রধান আসামি নাছিমা বেগমকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্য আসামিদের ধরতে পুলিশের একাধিক টিম অভিযান চালাচ্ছে।”
এলাকায় উত্তেজনা
এ ঘটনার পর পুরো এলাকায় আতঙ্ক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, সুদের কারবারে জড়িয়ে নাছিমা দীর্ঘদিন ধরে মানুষকে নানাভাবে হয়রানি করে আসছিলেন। এমনকি অসহায় পরিবারগুলোকেও হুমকি-ধামকি দিয়ে টাকার ফাঁদে ফেলতেন।
স্থানীয়রা জানান, “আজ যদি নাছিমার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে এ ধরনের ঘটনা আরও ঘটবে। সাধারণ মানুষ তার হাতে অতিষ্ঠ।”
ভুক্তভোগীর পরিবারের দাবি
পাখি বেগমের পরিবার ও স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, নাছিমা বেগমের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রেই এই হত্যাচেষ্টা চালানো হয়েছে। তারা নাছিমারদৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।