রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:১৪ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
রাজশাহীতে দুটি ট্রাকের ১০ লক্ষ টাকার যন্ত্রাংশ চুরির অভিযোগ নীলফামারীতে ৫ দফা দাবিতে জামায়াতের স্মারকলিপি চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা আমিনুল হকের ঢাকা-১৪ আসনে ধানের শীষে ভোট চেয়ে যুবদল নেতা সাজ্জাদুল মিরাজের বিশাল মিছিল ঝিনাইদহে সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযান অস্ত্র উদ্ধার আটক ২ জন ঝিনাইদহের মহেশপুরে বিজিবির অভিযানে ভারতীয় মদ উদ্ধার ও পাঁচ বাংলাদেশি আটক করতোয়া নদীতে নিখোঁজের৩২ ঘন্টা পর হৃদয়ের লাশ উদ্ধারের চুয়াডাঙ্গায় বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী নি*হত রাজশাহীতে খাদ্য বিভাগের গাফিলতি : ডিসি ফুড ও আরসি ফুডের ছত্রছায়ায় লুটপাট ঝিনাইদহে পিআরসহ ৫ দফা দাবিতে জামায়াতের র‌্যালি ও স্মারকলিপি পেশ

উত্তরার বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড প্রতিনিধি ও বিজিএমইএ’র বৈঠক

পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ, শুল্ক চ্যালেঞ্জ ও টেকসই উন্নয়ন নিয়ে সমন্বিত কৌশল প্রণয়ন

নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকার উত্তরার আকাশে সকালের সূর্য তখনও তেমন উঁকি দেয়নি। বিজিএমইএ কমপ্লেক্সের প্রবেশমুখে সারি সারি গাড়ি, ব্যস্ত নিরাপত্তারক্ষী, আর অতিথি অভ্যর্থনায় কর্মব্যস্ত আয়োজকরা। আন্তর্জাতিক পোশাক ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিরা যখন একে একে বৈঠক কক্ষে প্রবেশ করছিলেন, তখনই বোঝা যাচ্ছিল—বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প নিয়ে আজকের বৈঠক কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

বৈঠক কক্ষে টেবিল সাজানো হয়েছিল আধুনিক কনফারেন্স স্টাইলে। চারপাশে দেশের শীর্ষ রপ্তানিকারক উদ্যোক্তারা এবং সম্মুখে বিশ্বের ৪০টিরও বেশি ব্র্যান্ডের প্রতিনিধি। একে অপরকে অভিবাদন জানিয়ে হাসিমুখে করমর্দনের মধ্য দিয়েই শুরু হলো আলোচনার পরিবেশ।

মূল উদ্দেশ্য

বৈঠকের মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ কৌশল নির্ধারণ ও টেকসই উন্নয়নের পথ খুঁজে বের করা। আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে নতুন বাজার সম্ভাবনা, বৈশ্বিক শুল্ক চ্যালেঞ্জ ও শ্রমিক কল্যাণ নিয়ে একসাথে কাজ করার অঙ্গীকারই ছিল আলোচনার কেন্দ্রে।

আলোচনায় উঠে আসা বিষয়গুলো

দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা বৈঠকে আলোচনায় উঠে আসে—

যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ২০% শুল্ক মোকাবিলা ও বাজার ধরে রাখার কৌশল

সবার জন্য অভিন্ন সমন্বিত আচরণবিধি (Unified Code of Conduct) প্রবর্তন

প্রতিযোগিতা ধরে রাখতে পণ্য বৈচিত্র্যকরণ ও নতুন বাজার অনুসন্ধান

শ্রমিকদের কল্যাণে শ্রম সংস্কার ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা

কার্বন নিঃসরণ কমাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার

বাংলাদেশের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন-পরবর্তী রপ্তানি সুবিধা হারানোর ঝুঁকি মোকাবিলা

জিএসপি প্লাস সুবিধা অর্জনের প্রস্তুতি

সভাপতির বক্তব্য

বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বৈঠকের শুরুতেই বলেন—
“বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প শুধু অর্থনীতির চালিকাশক্তি নয়, এটি লাখ লাখ শ্রমিকের জীবিকার উৎস। আজকের এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা চাই, একসাথে কাজ করে শিল্পকে আরও প্রতিযোগিতামূলক ও টেকসই করে তুলতে।”

তিনি আরও যোগ করেন—
“আমরা জানি, আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকতে হলে মান, স্বচ্ছতা ও পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ জরুরি। বিজিএমইএ এসব ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড প্রতিনিধিদের অভিমত

ব্র্যান্ড প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের প্রতি আস্থা ব্যক্ত করে বলেন—
“বাংলাদেশ আমাদের অন্যতম প্রধান সাপ্লাই হাব। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শ্রমিক নিরাপত্তা ও পরিবেশবান্ধব কারখানা গড়ে তোলায় বাংলাদেশ যেভাবে অগ্রসর হয়েছে, তা প্রশংসনীয়। আমরা চাই এ সহযোগিতা আরও বাড়ুক।”

অনেকেই ভবিষ্যতে যৌথ বিনিয়োগ, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং শ্রমিক দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

বৈঠকের পরিবেশ

পুরো বৈঠক জুড়েই ছিল গম্ভীর অথচ আশাবাদী পরিবেশ। কেউ নোট নিচ্ছেন, কেউ আবার মনোযোগ দিয়ে বক্তব্য শুনছেন। কারও চোখে ভেসে উঠছে উদ্বেগ, আবার কারও মুখে ভবিষ্যতের আশাবাদ। বৈঠকের শেষে একে অপরের সঙ্গে করমর্দন আর দলীয় ছবিতে অংশ নিয়ে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড প্রতিনিধি ও বিজিএমইএ নেতৃবৃন্দ প্রতিশ্রুতি দিলেন—এই শিল্পের টেকসই ভবিষ্যৎ গড়তে সবাই একসাথে কাজ করবেন।

উপসংহার

আজকের এ বৈঠক শুধু আলোচনা নয়, বরং বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে নতুন দিগন্তে নিয়ে যাওয়ার এক যৌথ অঙ্গীকার। শিল্প বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বৈঠকটি বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, শ্রমবান্ধব সংস্কার এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক হয়ে থাকবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুকে আমরা