মোঃ বাবুল ময়মনসিংহ বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান
ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের অব্যবস্থাপনা নিয়ে তীব্র বাক্যযুদ্ধ, ইনচার্জকে বহিষ্কারের নির্দেশ,রোগী আসে হাসপাতালে জীবন বাঁচানোর আশায়। কিন্তু সেবা যখন কাঙ্ক্ষিত মানে পৌঁছায় না, তখন স্বাস্থ্যসেবার গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবে উঠে আসে। ঠিক এমন পরিস্থিতিতে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (মমেক) পরিদর্শনে গিয়ে চরম অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবু জাফর।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে ক্যাজুয়ালিটি (জরুরি) বিভাগ পরিদর্শনের সময় তিনি রোগী ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসাসেবার মান এবং প্রশাসনিক শৃঙ্খলা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তোলেন। জরুরি বিভাগে রোগীদের দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা এবং সেবা প্রাপ্তির জটিলতা দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেন ডিজি।
এ সময় ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের ইনচার্জ ডা. ধনদেব বর্মণ তাঁর বিভাগের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেন। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে জনবল সংকট, প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ঘাটতি এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পর্যাপ্ত সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে বিভাগটি সঠিকভাবে পরিচালনা করা কঠিন। এছাড়া তিনি বলেন, এই সীমাবদ্ধতার মধ্যে মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করা কার্যত অসম্ভব।
ডা. ধনদেব বর্মণের বক্তব্যে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ডিজি। একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে প্রকাশ্য উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় শুরু হয়। হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং রোগীর স্বজনদের সামনে সংঘটিত এই ঘটনার কারণে মুহূর্তের মধ্যে পরিবেশ থমথমে হয়ে ওঠে।
পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ডিজি চরম অসন্তোষ প্রকাশ করে ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের ইনচার্জ ডা. ধনদেব বর্মণকে তাৎক্ষণিকভাবে বহিষ্কারের নির্দেশ দেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
ঘটনার পর পুরো হাসপাতালজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। চিকিৎসক সমাজের একাংশ মনে করছেন, দীর্ঘদিনের কাঠামোগত দুর্বলতা ও অব্যবস্থাপনার দায় একজন ব্যক্তির ওপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতাই এ ঘটনায় প্রকাশ পেয়েছে। অন্যদিকে অনেকে বলছেন, প্রশাসনিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা এবং রোগীর অধিকার রক্ষায় কঠোর অবস্থান নেবার প্রয়োজন ছিল।
এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি। তবে স্বাস্থ্য অঙ্গনে এ ঘটনা ঘিরে ইতোমধ্যেই ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, প্রকাশ্য এই সংঘর্ষ দেশের অন্যতম প্রধান সরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।
ঘটনার পর হাসপাতালের সার্বিক ব্যবস্থাপনা, ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের কার্যক্রম এবং রোগীসেবার প্রকৃত অবস্থা খতিয়ে দেখতে ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে আলোচনা চলছে বলে নিশ্চিত সূত্রে জানা গেছে।