রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:০৬ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
আজ বাংলাদেশ সেন্ট্রাল প্রেস ক্লাব (B.C.P.C) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব খান সেলিম রহমানের সম্মানে ভোলায় প্রীতি আড্ডা ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে ‎মুক্তাগাছার কালিবাড়ীতে জামায়াতে ইসলামীর মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত। কাশিমপুরে সাধু সন্ন্যাসীর বিরুদ্ধে আল্লাহকে কটুক্তি করায় আগামীকাল মামলা দায়েরের প্রস্তুতি ও গণজমায়েত। ময়মনসিংহ মেডিক্যালে তীব্র উত্তেজনা সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই ডিজির সঙ্গে চিকিৎসকের প্রকাশ্য সংঘর্ষ আগ্রাবাদে ওয়ান্ডারল্যান্ড এ্যামিউজমেন্ট পার্কের উদ্বোধন করলেন মেয়র ডা. শাহাদাত শম্ভুগঞ্জে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা ও ছানি অপারেশন সেবা,দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতে মানবিক উদ্যোগে মানুষের ঢল কিন্ডারগার্টেনের জন্য সরকারি নীতিমালার আশ্বাস আমিনুল হকের বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় আখাউড়ায় ছাত্রদলের দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত নওগাঁ-২ আসনে বিএনপির মনোনীত এমপি প্রার্থী সামসুজ্জোহা খানের বিশাল মোটরসাইকেল শোডাউন নলডাঙ্গার মাধনগরে বিএনপির উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত। জামালপুরে সাংবাদিক নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন কালীগঞ্জে বেগম জিয়ার সুস্থতা কামনায় হাজারো মুসল্লীর সমবেত দোয়া শুধু বিএনপির নয় বেগম জিয়া দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের নেত্রী- সাইফুল ইসলাম ফিরোজ লোহাগাড়ায় যানজট নিরসনে প্রশস্ত হচ্ছে সড়ক। সন্ত্রাসীরা‎ দক্ষিণ আফ্রিকায় গুলি করে হত্যা করেছে মির্জাপুরের প্রবাসী ব্যাবসায়ী আমিনুল ইসলামকে সচ্ছলতার স্বপ্ন অধরাই,দুবাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন শান্তিগঞ্জের শিপন মিয়া সোনারগাঁও সরকারি কলেজে ইসলামী ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে ক্যারিয়ার গাইডলাইন সফল প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত। বাংলাদেশ সেন্ট্রাল প্রেস ক্লাব (B.C.P.C)-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি খান সেলিম রহমানের শ্বশুরের ভোলায় দাফন সম্পূর্ণ হয়েছে। আখাউড়া মুক্ত দিবসে দুই দিনব্যাপী কর্মসূচির সমাপ্তি: স্মৃতি সৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, বিজয় র‌্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত অনলাইন সাংবাদিকতায় চ্যালেঞ্জ নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কর্মশালা অনুষ্ঠিত

জামায়াতের হিন্দু প্রার্থী: নতুন রাজনৈতিক বার্তা, নাকি ভোটের হিসাব?

ড. এ জেড এম মাইনুল ইসলাম পলাশ

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংখ্যালঘু ভোট সবসময়ই বিশেষ গুরুত্ববহ। বিশেষ করে যেসব আসনে হিন্দু জনগোষ্ঠীর ঘনত্ব বেশি, সেসব অঞ্চলে ধর্মীয় পরিচয় সরাসরি প্রভাব ফেলে নির্বাচনী সমীকরণে। এ কারণেই খুলনা-১ আসনে জামায়াতে ইসলামী প্রথমবারের মতো একজন হিন্দু প্রার্থী- কৃষ্ণ নন্দীকে মনোনীত করার সিদ্ধান্ত শুধু ওই অঞ্চলের রাজনীতিতে নয়, জাতীয় রাজনীতিতেও নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
জামায়াত একটি ইসলামভিত্তিক দল, যার আদর্শিক কাঠামো, নেতৃত্বচর্চা ও সংগঠন সবই দীর্ঘদিন ধরে ধর্মীয় মূল্যবোধকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। সেই দলের প্রার্থী তালিকায় একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বীর উপস্থিতি নিছক প্রতীকী বা আবেগের বিষয় নয়; বরং এটি দলটির দীর্ঘদিনের আদর্শিক অবস্থানের একটি কৌশলগত পুনর্মূল্যায়ন বলেই মনে হয়। এ পরিবর্তন দলটির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক উপলব্ধি ও ভবিষ্যৎ কৌশল পুনর্বিন্যাসের গভীর প্রয়াসকে সামনে আনে।

▪️ কৌশলগত বাস্তবতা নাকি মতাদর্শে পরিবর্তন?
জামায়াত নেতৃত্ব বলছে- ২০০৮ সালের পর গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন এনে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সদস্যপদের সুযোগ রাখা হয়েছে। সেই নীতির ধারাবাহিকতায় এবার প্রার্থী মনোনয়নও উন্মুক্ত করা হয়েছে। তবে এটি বাস্তব নীতি অনুসরণের সিদ্ধান্ত, নাকি বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশে দলটির জন্য একটি আত্মরক্ষামূলক কৌশল- এ নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।
খুলনা-১ আসনের ইতিহাস দেখলে বোঝা যায়, এ এলাকা মূলত হিন্দু অধ্যুষিত। স্বাধীনতার পর থেকে এ আসনে হিন্দু প্রার্থীর জয়সংখ্যাই বেশি। আওয়ামী লীগ এখানে দীর্ঘদিন ধরে সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল, যার অন্যতম কারণ ছিল হিন্দু ভোটব্যাংক। কিন্তু পাঁচই আগস্টের পর রাজনৈতিক পালাবদলের প্রেক্ষাপটে যখন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ, তখন সংখ্যালঘু ভোটারদের বড় অংশ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে- তারা কোন রাজনৈতিক শক্তিকে নিরাপদ মনে করবে, সেটি অস্পষ্ট হয়ে ওঠে।
এই পরিস্থিতিতে জামায়াত যে দ্রুত তাদের কৌশল বদলে সংখ্যালঘু ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে- এটি অস্বাভাবিক নয়। দলটি এখন ঠিক সেই জায়গায় অবস্থান করছে, যেখানে রাজনৈতিক বাস্তবতাই তাদেরকে অভিযোজন ও পরিবর্তনের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ যেমন হিন্দু ভোটকে কৌশলগতভাবে ব্যবহার করেছে, জামায়াতও এখন সেই পথেই হাঁটছে। দলীয় ব্যাখ্যা যাই হোক, সংখ্যালঘু ভোটারদের নির্বাচনী সমীকরণে যুক্ত করাই যে মূল লক্ষ্য- তা রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ স্পষ্টই দেখাচ্ছে।

▪️ তৃণমূলের চাপ ও ইমেজ রিব্র্যান্ডিং
জামায়াত নেতৃত্বের দাবিতে উঠে এসেছে যে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের পরামর্শ এবং কৃষ্ণ নন্দীর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটি দলটির সাংগঠনিক সংস্কৃতিতে একটি নতুন প্রবণতার ইঙ্গিত দেয়। বাংলাদেশের দলীয় রাজনীতিতে ‘গ্রাসরুট প্রেসার’ বা তৃণমূলের চাপ খুব কমই গুরুত্ব পায়। কিন্তু জামায়াত এবার যে এই যুক্তি সামনে আনছে- এটি স্পষ্ট করে দলটি নিজেদের সংসদীয় রাজনীতিকে নতুনভাবে সাজাতে চাইছে।
গত এক বছরে আন্দোলনে মাঠে থাকার ফলে জামায়াতের দৃশ্যমানতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে শিবির-সমর্থিত প্যানেলের সাফল্য দলটিকে আরও আত্মবিশ্বাসী করেছে। ডাকসুতে শিবির প্যানেল থেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সর্বমিত্র চাকমা জয়লাভ করাও দলের জন্য একটি প্রতীকী সাফল্য- যা দেখায়, দলটি চাইলে ভিন্ন ধর্ম ও নৃগোষ্ঠির সদস্যদের নিয়ে ‘ইনক্লুসিভ’ রাজনীতির একটি সীমিত পরীক্ষামূলক মডেল দাঁড় করাতে সক্ষম। এখন প্রশ্ন- এটি কি সত্যিই মতাদর্শিক উদারীকরণের সূচনা, নাকি নির্বাচনমুখী বাস্তববাদ?
সম্ভবত দুইয়ের মিশ্রণই কাজ করছে। দলটি একইসঙ্গে দুটি লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করছে-
১. রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতার বিস্তার
২. ভোটের অঙ্কে লাভের সম্ভাবনা তৈরি
ফলে সিদ্ধান্তটি ধর্মীয় নীতি লঙ্ঘনের সাহসিকতা নয় বরং রাজনৈতিক বাস্তবতার পরিমিত গ্রহণ।

▪️ সংখ্যালঘু ভোটের নতুন সমীকরণ
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ১০ শতাংশ। দেশের অন্তত ৫০টির বেশি আসনে সংখ্যালঘু ভোট জয়-পরাজয়ের ব্যবধান তৈরি করতে পারে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসে, সংখ্যালঘু ভোটের গুরুত্ব তত বাড়ে- এটাই বাস্তবতা।
তবে দীর্ঘদিন ধরে সংখ্যালঘু ভোট বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের দিকে ঝুঁকে ছিল। বিএনপি কিছু কিছু অঞ্চলে সংখ্যালঘু ভোট পেয়েছে বটে, তবে সামগ্রিকভাবে তাদের অবস্থান ততটা শক্ত নয়। জামায়াত ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক কারণেই সংখ্যালঘু ভোটারদের কাছে সন্দেহজনক ছিল। তাই তাদের জন্য এই ভোটব্যাংকে প্রবেশ করতে হলে প্রয়োজন ছিল কৌশলগত আচরণ পরিবর্তন ও সাংগঠনিক বার্তা পুনর্নির্মাণ।
ঠিক সেই জায়গাটিই ধরেছে জামায়াত। খুলনায় ‘হিন্দু সম্মেলন’, হিন্দু কমিটির সক্রিয়তা, মাঠপর্যায়ে হিন্দু সদস্য সংগ্রহ এবং শেষে একজন হিন্দুকে মনোনয়ন দেওয়া- সব মিলিয়ে দলটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে: তারা নিজেদের রাজনৈতিক পরিধিকে সম্প্রসারণ করতে চায়।
এটি একদিকে সংখ্যালঘুদের কাছে সৌহার্দ্য প্রদর্শনের বার্তা, অন্যদিকে ভোটের বাস্তবতাকে কাজে লাগানোর কৌশল।

▪️এর রাজনৈতিক তাৎপর্য কোথায়?
জামায়াতের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের রাজনীতিতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে-
১. পরিচয়-ভিত্তিক রাজনীতির নরম হওয়া: ধর্মীয় পরিচয় বাংলাদেশের রাজনীতিতে গভীরভাবে প্রোথিত। কিন্তু জামায়াতের এই পদক্ষেপ দেখায়, রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা যত তীব্র হয়, দলগুলো ততই পরিচয়ের বাইরে গিয়ে ভোট সংগ্রহের পথে নামতে বাধ্য হয়।
২. দলীয় মতাদর্শের পুনর্মূল্যায়ন: জামায়াত বরাবরই ধর্মীয় পরিচয় ও আদর্শকে কেন্দ্র করে রাজনীতি করেছে। কিন্তু এই মনোনয়ন দেখায়- দলটি নিজেদের নীতি ও ভূমিকা নিয়ে অভ্যন্তরীণ আলোচনা শুরু করেছে, যা ভবিষ্যতে আরও বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত হতে পারে।
৩. সংখ্যালঘু ভোটের প্রতিযোগিতা: আগে যেটি ছিল একচেটিয়া আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক, এখন সেটি প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র হয়ে উঠছে। বিএনপি সাংগঠনিক দুর্বলতায় পিছিয়ে থাকায় জামায়াত সেই শূন্যস্থানে প্রবেশের চেষ্টা করছে।
৪. ইসলামপন্থি রাজনীতির উদারীকরণের পরীক্ষা: এটি কি স্থায়ী পরিবর্তন, নাকি সাময়িক কৌশল- এ প্রশ্ন ভবিষ্যতে স্পষ্ট হবে। তবে এটি যে একটি ‘পলিটিক্যাল এক্সপেরিমেন্ট’, তা অস্বীকার করা যায় না।

▪️ সর্বশেষ
খুলনা-১ আসনে একজন হিন্দু প্রার্থীকে মনোনীত করা শুধুমাত্র একটি দলের কৌশল নয়, বাংলাদেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতির একটি পরিবর্তনচিহ্ন। এটি কি সত্যিই মতাদর্শিক উদারীকরণ? নাকি নির্বাচনী অঙ্কে টিকে থাকার কৌশলগত জাম্প?
সম্ভবত উত্তরটি মাঝামাঝি কোথাও অবস্থান করছে। তবে এটুকু নিশ্চিত- বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংখ্যালঘু ভোট এখন নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত হচ্ছে। আগের মতো একমুখী নয়; বরং এটি এখন প্রতিযোগিতামূলক এবং পরিবর্তনশীল।
জামায়াতের এই সিদ্ধান্ত সেই পরিবর্তনের অন্যতম বড় নির্দেশক- যা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্বাচনী রাজনীতির গতিপথকে নতুন আকার দিতে পারে।

ড. এ জেড এম মাইনুল ইসলাম পলাশ
সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুকে আমরা