নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী জেলা গঠিত হওয়ার ২৫৫ বছরের ইতিহাসে প্রথম নারী জেলা প্রশাসক পায় রাজশাহী। রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে আসেন আফিয়া আখতার। ২০২৪ইং সালের ৫ আগস্ট হাসিনা সরকার পতনের পরে অক্টোবর মাসে দায়িত্ব পালন করেন।
যোগদানের পর থেকেই রাজশাহীর উন্নয়ন, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) আফিয়া আখতার ইতিমধ্যে গ্রহণ করেছেন নানা ইতিবাচক পদক্ষেপ। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তিনি কৃষি, পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় একের পর এক কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন সর্বমহলে।
তিনি রাজশাহীতে আসার পর থেকে সরকারী, বেসরকারী, আধাসরকারী, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানকে ঢেলে সাজাতে শুরু করেছেন। তার কঠোর নির্দেশনা ও বিচক্ষণতায় কমতে শুরু করেছে অনিয়ম, দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা। সরকারী সেবার পাশাপাশি সকল প্রকার সেবা জনগণের দৌরগোড়ায় পৌছে দিতে দিচ্ছেন নানা নির্দেশনা।
গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর রাজশাহীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিনি নিয়েছেন অসামান্য ভূমিকা।
তার নির্দেশনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত সময়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে ৯৩৮টি অভিযানে ৫৯৭টি মামলা এবং ৬০২ জনকে গ্রেফতার করে। মাদক দমনে প্রশাসনের কঠোর অবস্থান নিশ্চিত করতে তিনি প্রথম থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে সংস্কারে এই প্রথম রাজশাহীর ডিসি’র হস্তক্ষেপ পড়েছে। বন্দিদের দক্ষতা, প্রশিক্ষণ ও পূর্ণবাসনে ডিসি আফিয়া আখতার কারাগারে সংস্কারের নির্দেশনা দিয়েছেন। বন্দিদের জীবনমান উন্নয়নে যা হবে পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর।
শুধু রাজশাহী মহানগরীতে নয়। আফিয়া আখতারের উন্নয়নের ছোঁয়া পড়তে শুরু করেছে জেলার বিভিন্ন উপজেলায়। জেলার দূর্গাপুর উপজেলায় আব্দুল কুদ্দুস নামে এক ভিখারীকে ভিক্ষাবৃত্তি থেকে দোকান বরাদ্দ দিয়ে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন এই মানবিক ডিসি। এই উপজেলার পুরানতাহিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়, কালিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে, পানানগর দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়, দূর্গাপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, দূর্গাপুর কলেজ, দেবীপুর উচ্চ বিদ্যালয়, পাঁচুবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়, পালশা ও মাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে রাজশাহী ডিসির উদ্যোগে কমনরুম এবং হাইজিন কর্নার নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান এবং পরিবেশ বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে এই বিষয়ে কথা বললে তারা ডিসির এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান। পাঁচুবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মরিয়ম আক্তার বলেন, “আগে আমাদের ওয়াশরুম এবং মেয়েদের আলাদা রুমের কোন ব্যবস্থা ছিলনা। কিন্তু এখন আমাদের স্কুলে কমনরুম করে দেওয়া হচ্ছে। এতে করে আমাদের জন্য অনেক ভালো হবে। আমাদের শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করার জন্য রাজশাহীর ডিসি স্যারকে ধন্যবাদ জানাই।”
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিক উদ্দিন বলেন, “কমনরুম শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয়। যেখানে এ্যাটাস বাথরুম এবং সুপেয় পানির ব্যবস্থা রয়েছে। আমি মনে করি এটি শিক্ষার্থীদের জন্য আরো আগে করা প্রয়োজন ছিল। তবে যাইহোক, এটি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের একটি দারুণ পরিকল্পনা এবং কার্যকরী উদ্যোগ।”
দূর্গাপুর উপজেলা চত্বরে সেবা নিতে আসা জনসাধারণের বিশ্রাম এবং বই পড়ার জন্য উপজেলা চত্বরে জ্ঞানপিঁড়ি নামে একটি পাঠাগার নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে প্রতিদিন শতশত মানুষ সেবা নিতে এসে বিনামূল্যে বই পড়তে পারছেন।
রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলায় আফিয়া আখতার নিজ হাতে ১৪ টি অসহায় ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বাইসাইকেল বিতরণ করেছেন। যাতে অসহায় এই শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যাতায়াতে কোন কষ্ট না হয়। পুঠিয়ায় ২ হাজার ৫ শো করে ৫০ জন শিক্ষার্থীকে, ৬ হাজার করে ৪০ জন শিক্ষার্থীদের, ৯ হাজার ৫ শো করে টাকা ১৮ জন শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করেন জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার। পুঠিয়ায় মহারাণী হেমন্ত কুমারী শিশু কানন এর উর্দ্ধমুখী দ্বিতীয় তলা নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন তিনি।
এছাড়াও জেলার বাঘা উপজেলায় ৬জন প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিদের মাঝে বিনামূল্যে হুইল চেয়ার, একজন শিক্ষার্থীকে ট্রাই সাইকেল ও একজনকে ক্রাচ বিতরণ করেন।
রাজশাহীর সর্বস্তরে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতারের নেতৃত্ব এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নাগরিকবান্ধব প্রশাসন গড়ে তোলার পাশাপাশি তিনি রাজশাহীর সামগ্রিক উন্নয়নকে আরও টেকসই ও ইতিবাচক করে তুলতে শুরু করেছেন।
উপজেলা পর্যায়ে একজন ডিসির সরেজমিনে উপস্থিতিতে উন্নয়ন কর্মকান্ড পেয়ে খুশি সাধারণ মানুষ। এছাড়াও জেলা প্রশাসকের দপ্তরে সেবা প্রত্যার্শীরা আফিয়া আখতারের সুনিপুণ কাজের প্রশংসা করেছেন। মনিরুল ইসলাম নামের এক সেবা প্রত্যাশী জানান, সম্প্রতি তিনি তার একটি ব্যক্তিগত কাজে গিয়েছিলেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে। সুন্দরভাবে কাজটি করতে পেরে মানসিক তৃপ্তি পেয়েছেন তিনি।
হালিমা খাতুন নামের অপর একজন সেবা প্রত্যাশি বলেন, তিনি আর্থিক সাহায্যের জন্য গিয়েছিলেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা ছাড়াই সহযোগিতা পেয়ে খুশি হয়েছেন তিনি। সেবা প্রত্যাশী আমীর হোসেন বলেন, দেশের প্রতিটি জেলায় জেলায় যদি এমন একজন সদালাপী, হাস্যজ্জল, বিনয়ী ও মানবিক ডিসি থাকতো তাহলে সোনার বাংলা গড়তে সময় লাগতো না।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার, রাজশাহীর উন্নয়নে নগরবাসীর সহযোগীতা চেয়েছেন।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ৩০ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন-২ শাখার প্রজ্ঞাপনে চট্টগ্রামের জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার আফিয়া আখতারকে রাজশাহী জেলার ডিসি পদে পদায়ন করা হয়েছিল।