সাখাওয়াত : ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পোড়ানো গৃহবধূ শাহনাজ বেগম (৩৮) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ দিন পর ঢাকার বার্ন ইনস্টিটিউটে মারা গেছেন। বুধবার (১ অক্টোবর) দুপুরে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া, পাশাপাশি দেখা দিয়েছে তীব্র ক্ষোভ।
স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলেছেন—“এত বড় ঘটনা ঘটলেও পুলিশ কেন মূল আসামিদের এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি?”
কীভাবে ঘটেছিল ঘটনা
গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক ৮টার দিকে উপজেলার পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের উপাধিক গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শাহনাজ ওই এলাকার গাজী বাড়ির আমিন হোসেনের স্ত্রী ও দুই সন্তানের জননী।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, টয়লেট থেকে বের হওয়ার সময় মুখোশধারী তিনজন দুর্বৃত্ত শাহনাজকে হাত-পা বেঁধে তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। চিৎকার শুনে তার মেয়ে সুমাইয়া ও আশপাশের লোকজন ছুটে এসে গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে চাঁদপুর সদর হাসপাতাল এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করান।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাহনাজ জানিয়েছিলেন, প্রতিবেশী নাছিমা বেগমের সঙ্গে সুদের টাকার বিরোধের জের ধরেই বারবার তাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল।
সুদের টাকার দ্বন্দ্ব
শাহনাজ নাছিমার কাছ থেকে এক লাখ টাকা ধার নেন এবং লিখিত দেন। পরে ৫০ হাজার টাকা শোধ করলেও নাছিমা আরও দেড় লাখ টাকার দাবি করেন। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিক সালিশ হলেও প্রমাণ মেলেনি। আদালত পর্যন্ত মামলা গড়ায়। এরপর থেকে শাহনাজের উপর একাধিকবার হামলা হয়েছিল বলে জানা যায়।
পরিবারের অভিযোগ
নিহতের স্বামী আমিন হোসেন বলেন,
“আমার স্ত্রীকে দুর্বৃত্তরা পরিকল্পিতভাবে আগুন দিয়ে হত্যা করেছে। ৫ দিন ধরে যন্ত্রণায় ভুগে শেষমেষ মারা গেলেন। অর্থাভাবে সঠিক চিকিৎসা করাতে পারিনি। আমি স্ত্রীর হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।”
এলাকাবাসীর ক্ষোভ
স্থানীয় ইউপি সদস্য হামিদ মেম্বার বলেন,
“এলাকার একজন গৃহবধূকে পুড়িয়ে হত্যার মতো ঘটনা ভয়াবহ। কিন্তু পুলিশ এখনও মূল আসামিদের ধরতে পারেনি কেন? আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
অন্যদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ, বারবার হামলার ঘটনা ঘটলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুরুত্ব দেয়নি। বাড়ির লোকজনও হয়তো চাপের মুখে মুখ খুলছেন না। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের হতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
পুলিশের বক্তব্য
ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহ্ আলম বলেন,
“শাহনাজ জীবিত অবস্থায় কাউকে সুনির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করতে পারেননি। তবে এ ঘটনায় আইনগত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। নাছিমা বেগমকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। দ্রুতই জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।”